উন্মাদ দিনলিপি - ৩
 ---------------
 নেশা কেটে গেলে ভারি মাথা ধরে থাকে ইদানীং
 সকালবেলায় রোদ চোখে এসে পড়ে যেন আগুনে মশাল
 সাতান্ন ফিরিস্তি কাজ
 আমি তো কাজেরই লোক বাপু
 কিছুটা পেটালে ঢাক কেন এত শোরগোল করো
 
 জানলার কাচ আর আকাশী রঙের পর্দাটা
 কতদিন ধরে যেন একই ভাবে হয়ে আছে স্থির
 বদলানো দরকার, বদলানো দরকার জানি
 এখনো করিনি ঠিক – কাচ ভেঙে দেবো নাকি
 খরিদ করবো কড়া লোহার গরাদ
 
 বদলানো দরকার জানি - বন্ধুরা বলে বদলেও গেছি রীতিমতো
 এখন আমাকে দেখে মনে হয় হৃদয়বৃত্তিহীন পশু
 এখন আমাকে দেখে চেনা যায় কতটা ছলনা ছিলো
 কতটা বিবেক
 
 তাই হোক, চেনা যাক, ক্ষতি কিছু নেই
 প্রয়োজন মিটে গেলে বাতিলই তো হয় কত কিছু
 শবদাহ সারা হলে ব্যবহৃত চাদর, বালিশ
 শীতকাল চলে গেলে আরামের লেপ, আলোয়ান
 ওদের গুছিয়ে রাখো, আসলে সরিয়ে রাখো দূরে
 যত্নের সিন্দুকে, যাতে না দেখতে হয় মুখ
 যাতে না ছোঁয়াচ লাগে
 যাতে না স্পর্শ করে বিগত হিমের বাধ্যতা
 
 জানি, জানি সবটুকু প্রয়োজনে নয়
 অতলান্ত ভালোবাসা আছে
 দিগন্তবিস্তৃত তব হৃদয়ের উষ্ণতারাজি
 অতলের খোঁজ পেতে যতটা সাঁতারু হতে হয়
 ততটা কষ্ট দিয়ে গড়া যায় পাথরের স্তূপ
 তাকে যে ডিঙোতে পারে সে বোধ হয় জানে
 আমার বাগান নেই, নেই কোন স্নিগ্ধ উঠোন
 
 কখনো আটকে পড়ি গোলকধাঁধায়
 এত আলো, ব্যথা করে ওঠে
 মনে মনে বলি, 'আমাকে অন্ধ করো
 আমাকে অন্ধ করে দাও
 ভালো ছিলো চিলেকোঠা ঘর, ভালো ছিলো
 পাঁচিলের ঘেরাটোপ, কানাগলি, স্থবির শ্মশান
 এতটা জীবন বড় ব্যথা দেয়, এত আলো
 আমাকে অন্ধ করে দাও'
 
 আমাকে খণ্ড করে দাও, বিচ্ছিন্ন করো
 এবার নিজেকে দেখি নিজের দু'চোখ দিয়ে
 তোমরা তো জানো আমি কতটা বদমেজাজী, কত অমানুষ
 বড্ড ইচ্ছে হয় আমিও তেমনই জানি
 কতটা বদমেজাজী, কত অমানুষ আমি
 কত অচ্ছুত
 
 ভারি মাথা ধরে থাকে ইদানীং, নেশা কেটে গেলে
 অঝোরে বাড়তে থাকে রাত
 কাজের ফিরিস্তিগুলো ছেঁড়া ফাটা ঘুড়ির মতন
 গোঁত খায় মেঘলা আকাশে
 তুমি যা জানো না, ওরা জানে -
 আমার উঠোন নেই, নেই কোন স্নিগ্ধ বাগান...
 
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন